সোল্ডারিং আয়রন (Soldering Iron) বা তাঁতাল
সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝালাই:
সোল্ডারিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া – যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ধাতুকে বা ইলেক্ট্রনিক্স কম্পোনেন্ট (Electronics Component) একে অপরের সাথে জোড়ক পদার্থ দ্বারা তাপ বা অন্যকোন বিশেষ শক্তি প্রয়োগ করে জোড়া দেওয়া হয়।
জোড়ক পদার্থ বা জোড়া দেয়ার পদার্থ:
জোড়ক পদার্থ হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যার নিম্ম গলনাংক থাকে (যে ধাতু ঝালাই দেওয়া হবে তা থেকে) এবং এর বিশেষ ধর্মের কারনে এটি ধাতুর সাথে আটকে বা লেগে থাকে।
ইলেক্ট্রনিক্স কাজে রাং বা সোল্ডারিং লিড বা সোল্ডার হলো জোড়ক পদার্থ।
রাং বা সোল্ডারিং লিড (Soldering Lead) বা সোল্ডার (Solder):
রাং বা সোল্ডারিং লিড হলো এক ধরণের সংকর পদার্থ, এটি ৬০ ভাগ টিন (Tin) এবং ৪০ ভাগ সীসা (Zing) দিয়ে তৈরী, এটির গলনাংক ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সংকরায়নের অনুপাতের তারতম্য এর কারনে গলনাংক আরো বেশী হতে পারে।
ভাল মানের সোল্ডারিং লিড এর ভেতর ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin) থাকে। একে রেজিন কোর সোল্ডারিং লিড (Resin Core Soldering Lead) বলে। পাশের চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন একটি সোল্ডারিং ওয়্যার বা তার। যার অভ্যন্তরে কালো বিন্দু চিহ্নিত অংশটুকু হচ্ছে সোল্ডারিং ফ্লাক্স বা রেজিন।
ফ্লাক্স বা রজন (Resin):
ফ্লাক্স বা রজন হলো একধরণের পদার্থ যা কিনা প্রাকৃতিকভাবে গাছের কষ (আঠা) থেকে তৈরী আবার এটি রাসায়নিক ভাবেও বানানো হয়।
ইলেক্ট্রনিক্স কাজে ফ্লাক্স (Flux) বা রজন (Resin):
যখন সোল্ডারিং লিড দিয়ে ঝালাই করা হয় তখন ঝালাইয়ের অংশটুকু পরিষ্কার করার কাজে ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করা হয়, এছাড়া ঝালাইয়ের সময় যেন অক্সিডেশন (Oxidation) প্রক্রিয়া ঝালাইয়ে ব্যঘাত ঘটাতে না পারে সেজন্য ফ্লাক্স বা রজন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অনেকেই বলে ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করলে রাং বা সোল্ডারিং লিড নরম হয় বা সহজে গলে যায় , আসলে এই ব্যাপারটা হল অক্সিডেশন প্রক্রিয়া না ঘটতে দেওয়া , অক্সিজেন (Oxygen) রাং বা সোল্ডারিং লিড (Tin & Zing) এর সাথে বিক্রিয়া করে এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, আর ফ্লাক্স বা রজন তা করতে বাঁধা দেয় বা করে ফেললেও তা দূর করে দেয়।
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর টিপ বা বিট পরিষ্কার করতেও ফ্লাক্স বা রজন ব্যবহার করা হয়।
সোল্ডারিং আয়রন (Soldering Iron) বা তাঁতাল:
সোল্ডারিং বা ঝালাই করার মূলযন্ত্র হল সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল। এটি বৈদ্যুতিক শক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করে। সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর চারটি অংশ বডি, বিট, টিপ, কয়েল, ইলেক্ট্রিক তার।
বডি (Body):
বডি দুটি অংশ দিয়ে গঠিত। বডির হাতল অংশটি তাপরোধী প্লাস্টিক বা কাঠ দিয়ে তৈরী। আর অপর অংশটি ধাতু (টিন বা লৌহ জাতীয় পদার্থ) দিয়ে তৈরী।
বিট (Bit) / টিপ (Tip):
সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর মূলত যে অংশ দিয়ে ঝালাইয়ের এর কাজ করা হয় তাই বিট/টিপ নামে পরিচিত। এটি সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল এর অগ্রভাগ। এর আকার আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়। যেমনঃ চ্যাপ্টা, চোখা, সূচাল। কাজের সবিধার জন্য কখনও ৪৫ ডিগ্রি বাঁকান আবার কখনও ৯০ ডিগ্রি সোজা থাকে। তাতালের আকার বা শক্তির উপর ভিত্তি করে চিকন- মোটা বা বড়-ছোট বিট হয়। বিট কয়েক ধরনের হয় , যেমনঃ তামার তৈরী বিট (সাধারণ বিট) তামার উপর সিরামিক কোটিং করা বিট (সিরামিক বিট), বিশেষ কাজের জন্য বিশেষ ধাতু দ্বারা তৈরী বিট।
কয়েল (Coil):
বিদ্যুৎ শক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করতে কয়েল ব্যবহার করা হয়। কয়েল এর ওয়াট যত হয় তত ওয়াট এর সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল বলে গন্য করা হয়। অতি সূক্ষ্ম নাইক্রম (Nichrome wire) তার চিনামাটি বা এলুমিনিয়াম এর কোর এর উপর পেচিয়ে কয়েল বানান হয়। (কোরটি দেখতে সরু পাইপের মত, যার দরুন এর ভিতর দিয়ে বিট প্রবেশ করতে পারে)।
ইলেক্ট্রিক তার (Electric Wire):
কয়েল এ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য ইলেক্ট্রিক তার ব্যবহার করা হয়।
সোল্ডারিং (Soldering) বা ঝলাই করার নিয়মঃ
প্রথমে সার্কিটের যে স্থান ঝালাই করা হবে সেই স্থান ঘষে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং যে কম্পনেন্ট ঝালাই করা হবে সেটির লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন ঘষে পরিস্কার করে নিতে হবে। এবার কম্পনেন্টকে সার্কিটের জায়গা মত স্থানে স্থাপন করে নিয়ে তাতাল বা সোল্ডারিং আয়রন দিয়ে ঝালাইয়ের স্থান একটু গরম করে নিতে হবে। এবার ঝালাই এর স্থানে এক হাত দিয়ে ৪৫ ডিগ্রী বাকা করে তাতাল বা সোল্ডারিং আয়রন ধরি এবং অন্য হাতে ৪৫ ডিগ্রী বাঁকা করে সোল্ডারিং লীড বা রাং ধরি নিচের চিত্র মোতাবেক।
পরিমান মত সোল্ডারিং লীড বা রাং গলার পর তা সরিয়ে নেই এবং সোল্ডারিং আয়রন বা তাতাল দিয়ে ফিনিশিং করে ঝালাই সম্পন্ন করি। যদি কখনো সার্কিট বা কম্পনেন্ট এর জয়েন্ট ভালভাবে না হয় তবে কিছু পরিমান ফ্লাক্স বা রেজিন উক্ত স্থানে তাতাল দিয়ে গলিয়ে লাগিয়ে দিলে ঠিক মত ঝালাই হবে। প্রয়োজনে কম্পনেন্টের লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন গলিত রেজিন এ চুবিয়ে তাতাল এর বিট দিয়ে কম্পনেন্টএর লেগ/পা/টার্মিনাল/পিন ঘষে ঘষে পরিস্কার করে নেই।
ভাল ঝালাই এবং খারাপ ঝালাই এর পার্থক্য বুঝতে নিচের চিত্র লক্ষ্য করি-
টিপসঃ
- কখনো কখনো আয়রন এর বিট এ ময়লা লেগে থাকে বলে রাং ধরেতে/গলতে চায় না। এক্ষেত্রে কোন কিছু দিয়ে আয়রন(তাতাল) এর বিট পরিস্কার করে নিতে হবে।
- আয়রন(তাতাল) এর বিট কাজ করতে করতে কাজের অনুপোযোগী বা ভোঁতা হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে ফাইল (রেত/রেতি) দিয়ে বিট এর মাথা ঘষে ঠিক করে নিতে হয়।
- ভালো ঝালাইয়ের দেখতে চক চক করবে , মন্দ ঝালাই দেখতে ঘোলাটে দেখাবে ।
No comments:
Post a Comment